চালকুমড়ার রোগ ও প্রতিকার এবং আধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তি

 
চালকুমড়ার রোগ ও প্রতিকার এবং আধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তি


জাত নির্বাচন :- 

> হাইব্রীড চালকুমড়া : হীরা- ৪৫১ 

> বারি চালকুমড়া -১ 

> উফশী চালকুমড়া : সবুজ 

> চালকুমড়া ভৈরবী 

> চালকুমড়া ওয়ান্ডারফুল 

> চালকুমড়া সুমাইয়া 

> জুপিটার এফ ১ 

> পােলস্টার এফ ১ 

> দূরন্ত 

> দূর্বার 


মাটিঃ বন্যামুক্ত এবং নিস্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন দো - আঁশ ও এটেল দো - আঁশ মাটিতে এর চাষ ভাল হয় । 


বীজবপনের সময়ঃ সারা বছর কুমড়ার চাষ করা যায় । তবে চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত বীজবােনার উপযুক্ত সময় । 


জমি / মাদা তৈরিঃ- ঘরের চালে তুলে দিলে মাদা তৈরি করে নিতে হয় । আর জমিতে চাষ করলে কয়েকটি চাষ মই দিয়ে পরে মাদা তৈরি করতে হয় । 


গর্ত তৈরিঃ ৭৫ সেঃ মিঃ ( ২.৫ ফুট ) চওড়া ও ৬০ সেঃ মিঃ ( ২ ফুট ) গভীর গর্ত তৈরি করতে হবে । 


রােপণের দূরত্বঃ ২-২.৫০ মিটার দূরে দূরে মাদা তৈরি করে বীজ বুনতে হবে । 

বীজবপনঃ প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বুনতে হয় । প্রতি মাদায় দুটি সবল চারা রাখতে হবে । 

পরিচর্যাঃ প্রথমদিকে খরার সময় মাঝে মধ্যে সেচ দিলে ভাল হয় । বর্ষার পানি নিকাশের জন্য নালার ব্যবস্থা করতে হবে । গাছ বাওয়ার জন্য বাউনি মাচা দিতে হবে । মাঝে মাঝে কুপিয়ে মাটি আলগা করে গােড়ায় কিছু আলগা মাটি দিতে হয় । এতে আগাছাও দমন হয় । 

চালকুমড়ার রোগ ও প্রতিকার এবং আধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তি


কৃত্রিম পরাগায়নে ফলন বৃদ্ধিঃ 

চালকুমড়ার একই গাছে পৃথকভাবে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল জন্মায় । তাই উভয়ই পর - পরাগায়িত ফসল । এদের ফুল ধরার সময় হলে প্রথমে গাছে প্রচুর পরিমাণে পুরুষ ফুল আসে । পাশাপাশি স্ত্রী ফুলও জন্মায় । 


কুমড়া গাছে ফল ধরার জন্য পুরুষ ও স্ত্রী ফুলের মধ্যে পরাগায়ন অত্যাবশ্যক । পুরুষ ফুলের পরাগধানীতে পরাগরেণু থাকে । পরাগায়নের জন্য পরাগরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুলে স্থানান্তরিত হতে হবে এবং ফল ধারণ করবে ।


যদি সঠিকভাবে পরাগায়ন হয়ে থাকে তাহলে স্ত্রী ফুলটি একটা নির্দিষ্ট সময় পরে ঝরে যাবে এবং কুমড়াটি বাড়তে থাকবে । পরাগায়ন না হলে কচি ফলটি শুকিয়ে যায় , পচে যায় এবং ঝরে পড়ে । 


পরাগায়ন অসম্পূর্ণ থাকলে ফলের গঠন ভালাে হয় না এতে সবজির বাজারমূল্য কমে যায় , ফল ধারণক্ষমতা কমে যায় ও ফলন কম হয় । ফলের সঠিক গঠনের জন্য স্ত্রী ফুলের গর্ভমুলে যথেষ্ট পরিমাণে পরাগরেণু পরতে হবে । পরাগায়নের জন্য একটি মাধ্যম বা পলিনেটর দরকার হয় । 


চালকুমড়ার পরাগায়ন প্রধানত কীটপতঙ্গ বিশেষ করে মৌমাছির দ্বারা সম্পন্ন হয় । তবে অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত কীটপতঙ্গের অভাবে পরাগায়ন সঠিকভাবে না হওয়ার কারণে ফলন কমে যায় । 


প্রাকৃতিক পরাগায়নের মাধ্যমে বেশি ফল ধরার জন্য প্রতি একর জমিতে একটি করে মৌচাক বসিয়েও পরাগায়নের কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব অথবা চাষি নিজে পরাগায়ন করে দিলে আশাতীত ফলন আশা করতে পারে । 


বাংলাদেশের বেশির ভাগ চাষি প্রান্তিক ও ছােট পর্যায়ের সে জন্য কৃত্রিম পরাগায়নই তাদের একমাত্র সমাধান । গবেষণায় দেখা গেছে , হাত দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়ন করে মিষ্টিকুমড়ার ফলন শতকরা ২৫-৩৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। 


মিষ্টিকুমড়ার ফুল খুব সকালে ফোটে এবং ফুল ফোটার পর যত তাড়াতাড়ি পরাগায়ন করা যায় ততই ভালাে ফল পাওয়া যাবে । মিষ্টিকুমড়ায় কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৯ টার মধ্যে সমপন্ন করতে হবে । 


সারের মাত্রার ও প্রয়ােগ পদ্ধতিঃ  ইউরিয়া ১০-১২ কেজি , টিএসপি ৮-১০ কেজি , মিউরেট অব পটাশ ৩-৫ কেজি , জিপসাম ৩ কেজি , জিংক অক্সাইড ১০০-১৫০ গ্রাম জৈব সার যত দেওয়া যায় তত ভাল । ( শতাংশ অনুযায়ী ) । 


সার ব্যবহারের নিয়মঃ ইউরিয়া সার ছাড়া অন্যান্য সব সার বীজ বােনার ৭-৮ দিন আগে মাদার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে । 


পােকামাকড় ও রােগবালাই ব্যবস্থাপনাঃ-


চালকুমড়ার মাছিপােকার ক্ষতির ধরণঃ 

> এই পােকা মিষ্টিকুমড়ার কচিফল ও ফুলের মধ্যে প্রথমে ডিম পাড়ে । 

> পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফল ও ফুলের ভিতর কুরে কুরে খায় যার ফলে ফল ও ফুল পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায় । 

> এই পােকার আক্রমণের ফলে প্রায় ৫০-৭০ ভাগ ফল নষ্ট হয়ে যায় । 


সমম্বিত ব্যবস্থাপনাঃ 

> আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে তা নষ্ট করে ফেলতে হবে । 

> পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ । 

> সেক্স ফেরােমন ফাঁদের ব্যবহার । 

> মাছি পােকা দমনের জন্য বিষ ফাঁদ ব্যবহার করা । ( ঢাকনাসহ স্বচ্ছ প্লাষ্টিক পাত্রে জানলা কেটে বা ছােট মাটির পাত্রে ১০০ গ্রাম থেতলানাে চালকুমড়া কিছু পানিসহ বা চিটাগুড় এর সাথে ০.৫ গ্রাম ডিপটেরেক্স ৮০ এসপি বা ১৫ ফোটা যে কোন বালাইনাশক ব্যবহার করা ) 


> ২ মিলি সবিক্ৰণ , সাইপারমেথ্রিন বা ১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা । 


চালকুমড়া রােগ বালাইঃ 

সাদা গুঁড়া রােগ বা পাউডারি মিলডিউ রােগের লক্ষণঃ 

> রােগের প্রারম্ভে গাছের নিচের বয়স্ক পাতায় রােগের লক্ষণ প্রকাশ পায় । ক্রমশঃ উপরের পাতায় রােগ ছড়িয়ে পড়ে । 

> প্রথমে পাতার উপর বিক্ষিপ্ত সাদা সাদা দাগের সৃষ্টি হয় । 

> রােগ বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে দাগ আকারে বড় হতে থাকে এবং হলুদ বর্ণ থেকে বাদামী রঙ ধারণ করে ।

> রােগের প্রকোপ বেশি হলে গাছের লতা ও কান্ড আক্রান্ত হয় । ধীরে ধীরে সেই লতা ও পরে পুরাে গাছই মরে যেতে পারে।


সমন্বিত ব্যবস্থাপনাঃ

> রােগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আগাছা বিনাশ করতে হবে । 

> জমির আশে - পাশে কুমড়া জাতীয় যে কোন সবজি চাষ থেকে বিরত থাকা।

> আগাম চাষ করে রােগের প্রকোপ কমানাে যায় । 

> প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইনসাফ / থিওভিট / কুমুলাস অথবা ১০ গ্রাম ক্যালিক্সিন ১৫ দিন পর পর স্প্রে করে এ রােগ নিয়ন্ত্রণ করা । 

> টিন্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মিলি বা রনভিট -২ গ্রাম / প্রতি লিটার পানি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে । 


ফসল সংগ্রহঃ চালকুমড়া গাছ লাগানাের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ফল দেওয়া শুরু করে । চালকুমড়া সবজি হিসেবে খেতে হলে সবুজ হুল যুক্ত ৪০০-৬০০ গ্রাম হলে তুলতে হবে । মােরব্বা বা বড়ি দেওয়ার জন্য পরিপক্ক করে ১২০-১৩০ দিন পর তুলতে হবে । 


Reactions

Post a Comment

0 Comments