গ্রীষ্মকালীন শিমের রোগ ও প্রতিকার এবং আধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তি

গ্রীষ্মকালীন শিমের রোগ ও প্রতিকার এবং আধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তি



জাতঃ-  বারি শিম -৩ ও বারি শিম -৭ । এ ছাড়াও ইপসা শিম -১ এবং ইপসা শিম -২ দুটি দিবস নিরপেক্ষ গ্রীষ্মকালীন শিমের উন্নত জাত । 


মাটিঃ দো - আঁশ মাটিতে এর উৎপাদন ভাল হয় । 


জলবায়ুঃ অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়া । 


বপনের সময়ঃ মধ্য জুন থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর ( আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস ) । 


বপন পদ্ধতিঃ ২ মিটার চওড়া বেড়ে ২-৩ মিটার দূরত্বে মাদায় বীজ বুনতে হবে । চারা গজালে মাদা প্রতি ১-২ টি সবল চারা রাখতে হবে । 


বীজের হারঃ হেক্টর প্রতি ৫-৭ কেজি এবং বিঘা প্রতি ১-১.৫ কেজি । 


সারের মাত্রা ( মাদা প্রতি ) ও প্রয়ােগ পদ্ধতি :

গ্রীষ্মকালীন শিমের রোগ ও প্রতিকার এবং আধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তি


অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যাঃ-  

> বপনকৃত বীজ থেকে চারা বের হওয়ার পর ৮-১০ দিনের মধ্যেই প্রতিটি মাদায় একটি সুস্থ সবল চারা রেখে বাকিগুলি উঠিয়ে ফেলতে হবে । 

> দেশি শিমের ক্ষেত সর্বদা আগাছামুক্ত রাখতে হবে । 

> গাছ ২৫-৩০ সেমি উঁচু হলেই বাউনী দিতে হবে এবং মাচা তৈরি করে শিম গাছকে তুলে দিতে হবে । তবে চারা গাছ মাচায় উঠা পর্যন্ত গােড়ার দিকে যেন না পেচাতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে । গােড়া পেচাতে না দিলে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন প্রায় ১০-১৫ % বেশি হয় । 

> মাটির রস যাচাই করে ১০-১৫ দিন পর সেচ দিতে হবে । 

> পুরাতন পাতা ও ফুল বিহীন ডগা / শাখা কেটে ফেলতে হবে । 


       শিমের ক্ষতিকর পােকামাকড় ও    রােগবালাইয়ের সমন্বিত ব্যবস্থাপনাঃ-


গ্রীষ্মকালীন শিমের রোগ ও প্রতিকার এবং আধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তি


শিমের ক্ষতিকর পােকামাকড় ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনাঃ-

শিমের জাবপােকার ক্ষতির ধরণঃ- 

> পূর্ণ বয়স্ক পােকা ও বাচ্চা উভয়ই ক্ষতি করে । 

> পােকা গাছের ডগা , পাতা , কান্ড ফুল ও ফলের রস চুষে খায় । 


> আক্রান্ত গাছে ফুল ও ফল হয় না । 

> আক্রান্ত বেশি হলে ডগা মারা যায় । 


সমন্বিত ব্যবস্থাপনাঃ- 

> আগাম শিমের জাত বপন করা । 

> জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার করা, যেমন প্রতি লিটার পানিতে বাইকাও ২ মিলি / সাবানের গুড়া / তামাক গুড়া । 


> আক্রমণ বেশি হলে বিকেলের শেষ ভাগে মৌমাছির চলাচল বন্ধ হলে ইমিডাক্লোপ্রিড ১ মিলি বা পিরিমর ডিপি ১-২ গ্রাম / প্রতি লিটার পানি মিশিয়ে স্প্রে করা । 


শিমের মাজরা পােকার ক্ষতির ধরণঃ- 

> পােকা কীড়া শিম ও বীজ নষ্ট করে খায় । 


সমন্বিত ব্যবস্থাপনাঃ- 

> জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা ( বাইকাও ) । প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি. । 


> আক্রমণ বেশি হলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে যেমন সাইপারমেথ্রিন ( রিপকর্ড ) -১ মিলি বা ডেসিস ১ মিলি বা সুমিসাইডিন .৫ মিলি / প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে । 


শিমের মাকড়ের ক্ষতির ধরণঃ- 

> ছােট ছােট মাকড় পাতার নীচে থাকে এবং পাতা ও কচি ডগার রস শুষে খায় ।


ব্যবস্থাপনাঃ-

> আক্রমণ বেশি হলে মাকড়নাশক ব্যবহার করতে হবে যেমনঃ নিউরােন -২ মিলি বা কেলথেন ১.৫ মিলি বা থিওভিট -২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে । 


শিমের কান্ড মাছি পােকার ক্ষতির ধরণঃ- 

> কীড়া গাছের নরম অংশ ছিদ্র করে ঢুকে এবং সে অংশ খেয়ে নষ্ট করে । 


সমম্বিত ব্যবস্থাপনাঃ-

> আক্রান্ত অংশ পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখা । 

> অন্তর্বাহী বালাইনাশক ব্যবহার করা । যেমনঃ হেক্টর প্রতি কার্বোফুরান ৫ জি ১০ কেজি বা ডায়াজিনন ৬০ ইসি ১.১২ লিঃ বা ৫-১০ গ্রাম দানাদার / প্রতি মাদায় / সবিক্রন -১ লিঃ 


শিমের রোগবালাইয়ের সমন্বিত ব্যবস্থাপনাঃ- 

                                 

শিমের এনথ্রাকনােজ রােগের লক্ষণঃ-

> কান্ড প্রথমে ক্ষতের সৃষ্টি হয় । যা পরে কান্ডকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে । 

> ক্ষতের রং কালাে থেকে বাদামী রংয়ের হয় । 

> পাতার নিচের দিকে শিরা বরাবর সরু সরু লাল ও কালাে দাগ পড়ে । 

> শিমের উপর ছােট ছােট বাদামী হতে কালাে রংয়ের বাঁকা এবং দাগ পড়ে । 


সমন্বিত ব্যবস্থাপনাঃ 

> রােগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা । 

> শিমের পরিত্যক্ত অংশ একত্র করে পুড়িয়ে ফেলা । 

> ব্যাভিষ্টিন বা প্রোভেক্স দ্বারা বীজশােধন করা । 

> গাছের রােগের লক্ষণ দেখা গেলে টপসিন এম ২ গ্রাম বা টিন্ট ২৫০ ইসি -০.৫ মিলি বা ডাইথেন এম ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা । 


শিমের পাতার দাগ রােগের লক্ষণঃ- 

> আক্রান্ত পাতায় ছােট ছােট গােলাকার হতে কালচে বাদামী রংয়ের দাগ পড়ে । 

> দাগের কেন্দ্র ধূসর রংয়ের ও কিনারা লালচে হতে বাদামি রংয়ের হয় । 

> দাগগুলি একত্রে বড় আকারের হয় ( ১ সেঃ মিঃ ) । 

> এমন কি গাছের শাখা প্রশাখা ও শিমে দাগ পড়ে । 


সমন্বিত ব্যবস্থাপনাঃ 

> রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা । 

> শিমের পরিত্যক্ত অংশ একত্র করে ধ্বংস করা । 

> রােগের মাত্রা বেশী হলে কার্বোনডাজিম -১ গ্রাম ( যেমন ব্যাভিষ্টিন , নােইন , এমকোজেম ) প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২/৩ বার স্প্রে করা । 


মােজাইক ভাইরাস রােগের লক্ষণঃ- 

> গাছের যে কোন বৃদ্ধি স্তরেই এ রােগ হতে পারে । 

> চারা অবস্থায় আক্রান্ত হলে গাছ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় । 


> এ অবস্থায় বীজ গজানাের পর বীজপত্র হলুদ হয়ে যায় এবং পরে চারা নেতিয়ে পড়ে । 

> বয়স্ক গাছে প্রথমে ডগার মাথায় কচি পাতায় এ রােগের লক্ষণ দেখা যায় । 


> এ রােগের আক্রমণে পাতায় হলুদ সবুজ ছােপ ছােপ মােজাইকের মত দাগ দেখা যায় । 

> দাগগুলাে অসম আকারের । দ্রুত বড় হয় এবং দাগগুলাে সম্পূর্ণ পাতাই ছেয়ে ফেলে । 


> এমনকি শিরা - উপশিরাও হলুদ হয়ে যায় । 

> মাঝে মাঝে ফলের রং সাদা হয়ে যায় । 

> ফুল কম আসে এবং অধিক আক্রমণে পাতা ও গাছ মরে যায় । 


সমম্বিত ব্যবস্থাপনাঃ- 

> আক্রান্ত গাছ দেখলেই প্রাথমিকভাবে তা তুলে ধ্বংস করা । 

> ক্ষেতের আগাছা পরিস্কার রাখা । 

> রােগাক্রান্ত গাছ থেকে কোন বীজ সংগ্রহ ও ব্যবহার না করা ।


ফসল সংগ্রহ ও ফলনঃ- জাতভেদে বীজ বপনের ৯৫-১৪৫ দিন পর শিমের শুঁটি ( পড ) গাছ থেকে তুলে বাজারজাতকরা যেতে পারে । ফুল ফোঁটার ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে শিম তোলার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় । 

৫-৭ দিন অন্তর অন্তর গাছ থেকে শিম তুললে মােট ১৩-১৪ বার গুনগত মানসম্মন্ন শুঁটি ( পড ) সংগ্রহ করা যায় এবং এতে হেক্টর প্রতি প্রায় ১৫-২০ টন শিম পাওয়া যায় ।

আজ এপর্যন্ত, সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর এরকম আরো বিভিন্ন সবজি ও ফলের রোগ-বালাই প্রতিরোধ ও আধুনিক প্রযুক্তির চাষের সকল বিষয় জানতে অবশ্যই আমাদের এই website এর সাথেই থাকুন।    



Reactions

Post a Comment

0 Comments