বিটি বেগুনের জাত ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
বিটি বেগুনের সুবিধাঃ
> বেগুনের প্রধান শত্রু ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পােকার আক্রমন থেকে বেগুনকে রক্ষা করে ।
> উদ্ভাবিত বিটি বেগুন এবং জাতসমূহ হাইব্রিড না হওয়ার নিজেদের বীজ কৃষকরা নিজেরাই উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে পারবে ।
> বীজ কেনার জন্য প্রতি বছর কৃষকদের কোন একক বীজ কোম্পানীর দারস্থ হতে হবে না ।
> কীটনাশক ব্যবহার সীমিত হওয়ার পরিবেশ দূষণ হবে না , কৃষকের স্বাস্থ্যের উগর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভবনা নেই ।
> উৎপাদন খরচ কম হবে এবং সর্বোপরি কৃষক তাদের কাঙ্খিত উৎপাদন বৃদ্ধিসহ আয় বৃদ্ধি করতে পারবে ।
আধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তিঃ
চারা উৎপাদন পদ্ধতিঃ
বীজতলায় বীজ বুনে চারা তৈরি করে পরে মাঠে চারা রােপণ করতে হয় । ৩ মি x ২ মি সাইজের বীজতলায় বিঘা প্রতি প্রায় ১৫ গ্রাম বীজের প্রয়ােজন । বীজতলার মাটি সুনিষ্কাশিত হওয়া আবশ্যক ।
বীজতলায় সারি করে ছিটিয়ে বীজবপন করা যায় । সারিতে বপনের জন্য প্রথমে নির্দিষ্ট দূরত্বে ( ৪ সে.মি ) কাঠি বা টাইন দিয়ে ক্ষুদ্র নালা তৈরি করে তাতে বীজ ফেলে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে ।
প্রথমে বীজতলায় ঘন করে বীজ ফেলতে হবে । চারা গঁজানাের পর থেকে ১০-১২ দিন পর্যন্ত হালকা ছায়া দ্বারা অতিরিক্ত সূর্যতাপ থেকে চারা রক্ষা করা প্রয়ােজন ।
বীজতলায় আচ্ছাদনঃ
আবহাওয়া এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বীজতলার ওপর আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করতে হবে যেন বৃষ্টির পানি ও অতিরিক্ত সূর্যতাপ থেকে বীজতলায় রক্ষা করা যায় ।
তবে কম খরচে বাঁশের ফালি করে বীজতলার প্রস্থ বরাবর ৫০ সেমি পর পর পুঁতে নৌকার ছৈ এর আকারে বৃষ্টির সময় পলিথিন দিয়ে এবং প্রখর রােদে চাটাই দিয়ে রক্ষা করা যায় ।
চারার যত্নঃ
> চারা গঁজানাের পর থেকে ১০-১২ দিন পর্যন্ত হালকা ছায়া দ্বারা অতিরিক্ত সূর্যতাপ থেকে চারা রক্ষা করা প্রয়ােজন ।
> প্রয়ােজন অনুযায়ী পানি সেচ প্রদান করতে হবে ।
> বীজতলায় মাটি দীর্ঘ সময় ভেজা থাকলে অঙ্কুরিত চারার রােগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় ।
> চারার শিকড় যথেষ্ট বৃদ্ধি পেলে রােদ কোন ক্ষতি করতে পারে না ।
> চারা গঁজানাের ১০-১২ দিন পর বীজতলায় প্রয়ােজন দুরত্ব ও পরিমাণ চারা রেখে অতিরিক্ত চারা অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে হবে ।
দ্বিতীয় বীজতলার চারা স্থানান্তরকরণঃ
প্রথম বীজতলা থেকে চাৱা উঠানাের আগে বীজতলায় পানি দিয়ে এরপর সুঁচালো কাঠি দিয়ে শিকড়সহ চারা উঠাতে হয়। উত্তোলিন চাৱা সাথে সাথে দ্বিতীয় বীজতলায় লাগাতে হয় ।
বাঁশের সুঁচালাে কাঠি বা কাঠের তৈরি সুঁচালাে ফ্রেম দ্বারা সরু গর্ত করে চারা গাছ লাগানাে হয় । লাগানাের পর হালকা পানি দিতে হবে এবং বৃষ্টির পানি ও রােদ থেকে রক্ষা জন্য পলিথিন বা চাটাই দ্বারা ঢেকে দিতে হবে ।
যে কোন উপায়ে চারার বৃদ্ধি সাময়িকভাবে কমিয়ে যেমন বীজতলায় ক্রমান্বয়ে পানি সেচের পরিমাণ কমিয়ে বা দুই সেচের মাঝে সময়ের ব্যবধান বাড়িয়ে চারাকে কষ্ট সহিষ্ণু করে তােলা যায় ।
কষ্ট সহিষ্ণুতা বর্ধকালে চারার শ্বেতসার জমা হয় এবং রোপণের পর এই শ্বেতসার দ্রুত নূতন শিকড় উৎপাদনে সহায়তা করে । ফলে সহজেই চারা রােপণজনিত আঘাত সয়ে উঠতে পারে ।
বীজতলায় চারার রোগ দমনঃ
বীজতলায় বপনকৃত বীজ গঁজানাের পূর্বে বীজ এবং পরে কচি চারা রােগাক্রান্ত হতে পারে । অঙ্কুরােদগমরত বীজ আক্রান্ত হলে তা থেকে আদৌ চারা গঁজায় না ।
গঁজানাের পর রােগে আক্রমণ হলে চারার কান্ড মাটি সংলগ্ন স্থানে পচে গিয়ে নেতিয়ে পরে । একটু বড় হওয়ার পর আক্রান্ত হলে চারা সাধারণত মরে না কিন্তু এদের শিকড় দূর্বল হয়ে যায় ।
চারা এভাবে নষ্ট হওয়াকে বলে ডেম্পিং অফ বীজতলায় মাটি সব সময় ভেজা থাকলে এবং মাটিতে বাতাস চলাচলে ব্যাঘাত হলে এ রােগ বেশি হয় । এ থেকে পরিমাণ পেতে হলে
> বীজতলায় মাটি সুনিষ্কাশিত রাখতে হবে ।
> প্রতিশেধক হিসেবে মাটিতে কাপটান , কপার অক্সিক্লোরাইড বা ডায়াথেন এম -৪৫ , ১-২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বীজতলায় মাটি ভালো করে ভিজিয়ে কয়েক দিন পর বীজ বপন করতে হবে ।
স্থান নির্বাচন ও জমি তৈরিঃ
বেগুন চাষের জন্য সব সময় সূর্যকিরণ পড়ে এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে ।
জমি ৪-৫টি চাষ দিয়ে এমনভাবে তৈরি করতে হয় যাতে জমিতে মাটি ঢেলা না থাকে , আগাছামুক্ত ও ঝুরঝুরে হয় । বেডে চারারােপণ করাই উত্তম ।
বেডের দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে প্রস্থ ৭০ সে.মি । সারিতে গাছ থেকে গাছের দুরত্ব ৭০-৮০ সে.মি হয়ে থাকে । নালার প্রস্থ ৩০ সে.মি এবং গভীরতা ২০ সে.মি ।
সারের মাত্রা ও প্রয়ােগ পদ্ধতিঃ
ইউরিয়া ছাড়া সুপারিশকৃত সকল সার জমি তৈরির শেষ চারের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে ।
ইউরিয়া সারের ৪০-৪৫ কেজি ৩ কিস্তিতে প্রয়াগ করতে হবে । ১ম কিস্তি চারা লাগানাের ১০-১৫ দিন পর, ২য় কিস্তি ফল ধরা আরম্ভ হলে এবং ৩য় কিস্তি ফল আহরণের মাঝামাঝি সময় দিতে হবে ।
মাটিতে দস্তা ও বােরনের অভাব থাকলে ৫০০ গ্রাম করে জিঙ্ক সালফেট ও বরিক এসিড শেষ চাষের সময় প্রয়ােগ করতে হবে । ২৫-৩৫ কেজি এমপি এর এক তৃতীয়াংশ শেষ চাষের সময় এবং বাকি অংশ ১ম কিস্তি ইউরিয়া সারের সাথে প্রয়ােগ করতে হবে ।
দানাদার ইউরিয়ার পরিরর্তে গুটি ইউরিয়া প্রয়ােগ করতে হলে গাছ থেকে ৩-৪ ইঞ্চি দূরে ২.৫-৩.০ ইঞ্চি মাটির গভীরে রিং আকারে প্রয়ােগ করতে হবে ।
চারা রোপণঃ বীজ বােনার ৩০-৩৫ দিন পরে চারা ৫-৬টি পাতা বিশিষ্ট হলে মূল জমিতে নিয়ে চারা রােপণ করা হয় ।
রােপণের সময় চারার নিচের দিকের বড় পাতা কেটে দিতে হবে । বিটি বেগুন জমির চার পার্শ্বে ১/২ সারি ( শতকরা ৫ ভাগ ) সাধারণ বেগুন ( নন - বিটি ) এর চারা উদ্বাস্ত ফসল ( refuge ) হিসেবে রােপণ করতে হয় ।
৭০ সেমি প্রশস্ত বেড়ে এক সারিতে রােপন করা হয় । দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেমি প্রশস্ত নালা এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দুরত্ব ৭০-৮০ সেমি রাখতে হবে ।
আন্তঃপরিচর্যাঃ রোপিত চারার দ্রুত বৃদ্ধির জন্য গােড়ার চারপাশে মাটি খুঁচিয়ে ঝুরঝুরে রাখা প্রয়ােজন ।
বেড পদ্ধতিতে যদি চারা রােপণ না করা হয় তবে চারা রােপণের দেড় মাস পর সারির মধ্যবর্তী স্থান থেকে মাটি তুলে তা গাছের গােড়ার দিতে হবে ।
এতে সারির মাঝখানে যে নালা হবে তা খরিপ মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের কাজে লাগবে । বেগুনের প্রথম ফুল আসার পূর্বে কান্ডের নিচের দিকে পার্শ্ব শাখা ছেটে দিতে হবে ।
সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাঃ ফসল ও মাটির অবস্থা দেখে সেচ প্রয়ােগ করতে হবে । কিস্তি সার প্রয়ােগের পর পরই সেচ দিতে হয়।
বেডের দু'পাশের নালা দিয়ে জমিতে সেচ দেয়া সুবিধাজনক । বেগুন জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না । নালায় সেচের পানি বেশিক্ষণ ধরে রাখা যাবে না , গ্যছের গােড়া পর্যন্ত মাটি ভিজে গেলে পানি ছেড়ে দিতে হবে ।
খরিপ মৌসুমে জমিতে পানি যাতে জমে সেজন্য পানি নিষ্কাশনের জন্য জমির চারপাশে নালা রাখতে হবে ।
আগাছা দমনঃ নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিড়ানী দ্বারা আগাছা পরিষ্কার করা আবশ্যক ।
খুঁটি দেওয়াঃ বেগুন গাছ যাতে হেলে পড়ে সেজন্য পরিণত বয়সে খুঁটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে ।


0 Comments