ল্যাংচা গুঁড়ো দুধ দিয়ে মিষ্টি তৈরির সেরা রেসিপি।

 

আজকে আমি এমন একটি মিষ্টির রেসিপি নিয়ে আপনাদের সামনে আসলাম যেটি খুবই বিখ্যাত একটি মিষ্টি। ' ল্যাংচা ' এই নামটি আশা করছি আমরা সবাই শুনেছি বা জানি। এই ল্যাংচা মিষ্টি পশ্চিমবঙ্গের শক্তিগড় নামক একটি স্থান থেকে এর উৎপত্তি আর তাই এটি শক্তিগড়ের ল্যাংচা নামে জগদ্বিখ্যাত। 

ল্যাংচা গুঁড়ো দুধ দিয়ে মিষ্টি তৈরির সেরা রেসিপি।


তো আমরা কিভাবে ল্যাংচা মিষ্টি খুব সহজে নিজেরাই বাড়িতে তৈরি করতে পারব সেটি জানার আগে ছোট্ট করে একটু জেনে নিই এর নামকরণ এবং উৎপত্তি কিভাবে হলো।


( ল্যাংচার ইতিহাস ) ল্যাংচার নামকরণ নিয়ে মতভেদ আছে, কথিত আছে ল্যাংচার উৎপত্তি কৃষ্ণনগরে। ওখানকার রাজকন্যার সাথে বর্ধমানের রাজকুমারের বিয়ে হয়েছিল। গর্ভবতী সেই রানীর একসময় খাবারে অরুচি আসে। কোন কিছুই ভালো লাগে না তার।


অনেক কাকুতি-মিনতির পর সে জানায় তার একটা বিশেষ মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করছে যার রংটা কালচে বাদামি হতে হবে। 


রাজকুমার টিন্ডারা পিটিয়ে জানালেন, যে এই মিষ্টি তৈরি করতে পারবে তাকে পুরস্কার প্রদান করা হবে। 


তখন কৃষ্ণনগর থেকে এক কারিগর এসে এই বিখ্যাত মিষ্টি তৈরি করেন যা রানীর এতটাই পছন্দ হয় যে সে এই কারিগর কে বর্ধমান এ থাকার জন্য প্রচুর টাকা-পয়সা আর জমি দিয়ে আবাস করে দেন।


( ল্যাংচা কোথায় বিখ্যাত ) আর সেই জায়গাটির নাম হচ্ছে শক্তিগড়। যে কারিগর এই মিষ্টি তৈরি করেছিল তার একটি পা সামান্য ছোট ছিল বলে সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতো। সবাই তাকে ব্যঙ্গ করে ল্যাংড়া বলে ডাকত। 


রানী মিষ্টি খেয়ে খুশি হয়ে মিষ্টির নামটাই রেখে দেন "ল্যাংড়া" যা কালের বিবর্তনে আজ "ল্যাংচা" হয়ে গেছে। এই হচ্ছে নামকরণের কথিত কাহিনী।


শক্তিগড়ের ল্যাংচার বৈশিষ্ট্য হলো এতে ছানা ও মাওয়ার ব্যবহার হয়। তবে আমি গুড়ো দুধ দিয়ে খুব সহজে এই ল্যাংচা মিষ্টি তৈরির রেসিপি টা আপনাদের সাথে শেয়ার করব।


তো ল্যাংচা মিষ্টি তৈরি করব কিভাবে সেটি জানার আগে চলুন প্রথমে আমরা দেখি ল্যাংচা মিষ্টি তৈরি করতে আমাদের কি কি উপকরণ লাগছে।


ল্যাংচা মিষ্টি তৈরির উপকরণ সমূহঃ-


১। ১ কাপ গুঁড়ো দুধ,

২। ১ কাপ ময়দা,

৩।১ চা চামচ বেকিং পাউডার,

৪। ১ চা চামচ চিনি,

৫। দেড় ঘি বা তেল,

৬। ১ কাপ লিকুইড দুধ,

৭। ১ কাপ ডিম,

৮। ২ কাপ চিনি,

৯। ৪ কাপ পানি,

১০। তেল ১ লিটার ( শুধুমাত্র মিষ্টি ভাজার জন্য)


ল্যাংচা মিষ্টি তৈরীর প্রস্তুত প্রণালীঃ-

( ল্যাংচা তৈরি করার পদ্ধতি ) ল্যাংচা মিষ্টি তৈরির জন্য প্রথমে একটি বড় সাইজের বাটি নিন। এরপর মিষ্টির ডো তৈরীর জন্য ১ কাপ গুঁড়ো দুধ নিন। তবে একটি কথা যখন আপনি দোকান থেকে গুঁড়োদুধ কিনবেন তখন অবশ্যই দেখে কিনবেন যেন প্যাকেটের গায়ে ফুল ক্রিম কথাটা লেখা থাকে। 


এরপর ১ কাপের ৩ ভাগের ১ ভাগ ময়দা,১ চা চামচ বেকিং পাউডার ও ১ চা-চামচ চিনি দিয়ে দিন। 


এরপর এই শুকনো উপকরণ গুলো একটু ভালো করে মিশিয়ে নিন এটি আপনি হাত দিয়ে বা যেকোনোভাবে করে নিতে পারেন এবার এই মিশ্রণটির মধ্যে দেড় চা চামচ ঘি দিয়ে দিন। 


তবে এক্ষেত্রে আপনি ঘি এর পরিবর্তে তেল ব্যবহার করতে পারেন। 

তবে ঘি বা তেল যেটাই ব্যবহার করুন না কেন সেটি হাত দিয়ে ভালো করে ডোলে ডোলে মিশ্রণটির সাথে মিশিয়ে নিন। 

মেশানো হয়ে গেলে তারপর এরমধ্যে ( ১ম বার )  ১ কাপের আট ভাগের এক ভাগ দুধ ও ওই একই পরিমাণ ফেটানো ডিম দিয়ে দিন। অর্থাৎ 30ml দিতে হবে। 


এখানে কিন্তু একটি ডিম বা অর্ধেক দিন এভাবে বলা হয়নি, কারন ডিম ছোট বড় হতে পারে তাই আপনি ডিম ভালো করে ফেটিয়ে তারপর একটি কাপের আট ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ 30 মিলি দিবেন এভাবে হিসাবটা সহজ হবে।

নিশ্চয়ই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। 


এবার এগুলো ভালো করে মিশিয়ে নিন তবে একটি কথা যদি আপনার গুঁড়ো দুধের পরিমাণ বাড়ে তবে অন্যান্য উপকরণ গুলো বাড়বে। এরপর এতে আরও   ( ২য় বার ) 30ml লিকুইড দুধ দিয়ে দিতে হবে। 


এরপর এগুলো ভালো করে মেখে নিতে হবে। এই যে উপকরণগুলো বললাম এগুলোর মাপ যেন সঠিক থাকে। এক্ষেত্রে আপনার যে কোন নির্দিষ্ট একটি কাপ হতে হবে, সেটি হতে পারে চায়ের কাপ বা অন্যকোন কাপ সেটির মাপ মতোই সব উপকরণ ব্যবহার করবেন। 


এরপর মিশ্রন গুলো মাখানোর পরে একটি ডো তৈরী হবে, যেটি হাতের সাথে লেগে যাবে একটু আঠালো প্রকৃতির। এক্ষেত্রে হাতের আঙুলগুলো নাড়াতে বেশ কষ্ট হবে আর এটাই হল পারফেক্ট ডো।


 পরিমাণ গুলো ঠিক থাকলে এমনিতেই এরকম ডো তৈরি হবে। এরপর ১০ মিনিট এটিকে ঢেকে রেখে দিন। ১০ মিনিট পর এই ডো-টি আর এরকম আঠালো থাকবে না। 


এরপর আমাদের একটি শিরা তৈরি করতে হবে। এজন্য একটি প্যানে ২ কাপ চিনি ও ৪ কাপ পানি দিয়ে চুলার আঁচ ফুল করে দিয়ে এটিকে ৫ থেকে ৭ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। 


চিনি একটু নেড়েচেড়ে দিন যাতে নিচ থেকে লেগে না যায়। তবে এই শিরা বেশি জ্বাল করা যাবে না তাহলে এটি ঘন ও বেশি মিষ্টি হয়ে যাবে। 


৫ - ৭ মিনিট পর শিরাটি তৈরি হয়ে গেলে চুলা বন্ধ করে রেখে দিন। 

এবার আমরা যে ডো-টি তৈরি করে রেখেছিলাম সেটিকে এখন ল্যাংচার আকার দিয়ে তৈরি করব। তো আমরা জানি ল্যাংচা একটু লম্বাটে হয়। 


তো আমাদের ল্যাংচার আকার দেওয়া হয়ে গেলে এগুলো ভাজার পালা। এজন্য চুলায় একটি প্যানে তেল বসিয়ে আঁচ দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে তেলটি যেন বেশি গরম না হয়। 

তেলটি এমন গরম হবে যেন তাতে আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দেখা যায়। এরপর এই তেল এর ভেতর মিষ্টি গুলো দিয়ে দিন। তেলের ভেতর মিষ্টি গুলো দেওয়ার পর এগুলো তলিয়ে গেছে।


 এবার আস্তে আস্তে প্যানের হাতলটি ধরে নাড়া দিন। তাহলে তেলের দুলুনিতে মিষ্টিগুলো তেলের উপর আস্তে আস্তে ভেসে উঠবে। এরপর চুলার আঁচটা মিডিয়াম রাখবেন এবং লেখাগুলো অনবরত নাড়তে থাকবেন। 


দেখবেন যেন সব পাস সমানভাবে ভাজা হয়। এরপর একটু পরে দেখবেন মিষ্টিগুলো আগের তুলনায় একটু বেশি ফুলে উঠেছে। এ সময় চুলার আঁচ টি একটু বাড়িয়ে দিন, না হলে মিষ্টির ভেতরে বাইরে থেকে বেশি ভাজা হয়ে যাবে। 

এক সময় দেখবেন মিষ্টিগুলো লালচে রঙ ধারণ করেছে। এরপর এগুলো আমরা চুলা থেকে তুলে নিব।


 এরপর আমরা যে শিরা তৈরি করেছিলাম সেটি আবারো চুলায় দিয়ে একটু মিডিয়াম আছে দিয়ে এর মধ্যে ল্যাংচা গুলো দিয়ে দিব। 


তবে খেয়াল রাখবেন যেন গরম তেল থেকে তোলা মাত্রই শিরার মধ্যে দিবেন না। একটু ঠাণ্ডা করে তারপর শিরার ভিতর দিয়ে দিন। 


এরপর চুলার আঁচ মিডিয়াম রেখে প্যানে ঢাকনা দিয়ে প্রায় ১০ মিনিট এটি জাল করতে হবে এরপর চুলাটি বন্ধ করে এই শিরার মধ্যে এই মিষ্টিগুলো ২ থেকে ৩ ঘন্টা রেখে দিন। 


এরপর এগুলো ভালোভাবে ঠান্ডা করে নিন। এবার তৈরি হয়ে গেল আপনার প্রিয় মিষ্টি ল্যাংচা। 

তো আশা করছি আপনি অবশ্যই বাড়িতে ট্রাই করবেন এবং পারফেক্টভাবে এটি তৈরি করতে পারবেন। 

যদি উপকরণগুলো যেভাবে এখানে বলা আছে সবগুলোই পারফেক্ট ভাবে করতে পারেন তো আশাকরি আপনার ল্যাংচা মিষ্টি ও খুব সুন্দর হবে এবং স্বাদ খুব সুন্দর হবে। 


তো এতক্ষন আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ। পরবর্তীতে আরও সুন্দর সুন্দর মজার রেসিপি নিয়ে আপনাদের সঙ্গে ফিরে আসবো। তো সেজন্য অবশ্যই আপনারা আমার সাথেই থাকবেন সুন্দর সুন্দর আরো মজাদার রেসিপি পাওয়ার জন্য। ধন্যবাদ সবাইকে।


Reactions

Post a Comment

0 Comments