Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Wigete

মাথা ব্যথা দূর করার ঘরোয়া সমাধান। মাথা ব্যথা মানেই কি মাইগ্রেনের সমস্যা?

 মাথা ব্যথা দূর করার ঘরোয়া সমাধান।


মাথা ব্যথা দূর করার ঘরোয়া সমাধান। মাথা ব্যথা মানেই কি মাইগ্রেনের সমস্যা?


আপনি যদি হঠাৎ হঠাৎ বা প্রায়ই মাথাব্যথায় ভোগেন তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য।

আজ আমি আপনাদের সাথে মৃদু থেকে শুরু করে তীব্র সব ধরনের মাথাব্যথা নিয়ে আলোচনা করব। কারণ গুলো সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলবো, যাতে আপনার মাথায় কেন ব্যথা হচ্ছে পুরোটাই বুঝতে পারেন।


এতে সমাধান মেনে চলতে সুবিধা হবে। শুরুতেই জানতে হবে সবচেয়ে common মাথা ব্যাথা নিয়ে। কারণ আপনার মাথা ব্যথা থাকলে এটা হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।


এটা এতটাই common যে প্রতি ১০০ জন মানুষের মধ্যে ৭৮ জনই এই মাথাব্যথায় ভোগেন জীবনের কোনো এক সময়ে। এটার নাম হচ্ছে টেনশন টাইপ মাথাব্যথা। তবে নামে টেনশন শব্দটা থাকলেও এটা টেনশন ছাড়াও আরো অনেক কারনেই হয়। আর কি সেই কারন গুলো।


মাথাব্যথার Common ৭টি কারন ও প্রতিকার :-

( মাথা ব্যথা কেন হয় ) 

১। ঘুমের কারনে মাথা ব্যাথা:- আপনি সারা সপ্তাহে প্রতিদিন ১০ ঘন্টা ধরে কাজ করেও সুস্থ বোধ করেন। কিন্তু ছুটির দিন লম্বা একটা ঘুম দিয়ে উঠে দেখেন মাথাব্যথা করছে। এটার কারণ হলো হঠাৎ মানসিক চাপ কমে যাওয়ার কারণে মাথায় এক ধরনের হরমোন কমে যাওয়া। আপনার এই মাথাব্যথা দেখা দিলে ঘাবড়ে যাবেন না।

বেশি ঘুমালে সবার মাথা ব্যথা না হলেও এটা বেশ common শুধু আপনার একার ক্ষেত্রে এটা ঘটে না।


সমাধান কি? আপনার এমন মাথা ব্যথা হলে ছুটির দিনে বেশি ঘুমানোর লোভ সংবরণ করুন। ৮ ঘণ্টার বেশি ঘুমানোর কারণে এই মাথা ব্যথা হতে পারে।


২। কম ঘুমের কারনে মাথা ব্যথা :- এটা তো গেল বেশি ঘুমানো নিয়ে। ঘুম কম হলেও মাথাব্যথা হতে পারে। অনেকের ঘুম কম হলে মস্তিস্কে ব্যথা অনুভব করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। অল্পতেই ব্যথা অনুভব হয়। তখন মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে।

আর ঘুম কম হতে থাকলে এই মাথা ব্যাথা বারবার দেখা দিতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।


আরো পড়ুন-


৩। নির্দিষ্ট কিছু খাবার :- চা-কফি, কোলা বা কোমল পানীয় খুব বেশি পরিমাণে খেলে অনেকের এই ধরনের মাথাব্যথা হতে পারে। কারণ এগুলোতে আছে ক্যাফিন যা মাথা ব্যাথা সৃষ্টি করতে পারে।

সমাধান কি? যদি এসব পানীয় পান করলে দেখেন যে আপনার মাথা ধরছে তাহলে এগুলো কম পরিমাণে পান করতে হবে। 


৪। পানি কম খাওয়া :- যতটুকু পানি খাচ্ছেন তার চেয়ে বেশি পরিমাণ পানি শরীর থেকে বের হয়ে গেলে মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে। আমরা অনেকেই বুঝতে পারিনা কখন শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। শুধুমাত্র বমি বা ডায়রিয়া নয় অতিরিক্ত ঘামলে বা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলেও পানি সল্পতা দেখা দিতে পারে।

সমাধান কি? দিনে অন্তত ২ লিটার পানি পান করতে হবে। মাথা ব্যাথা শুরু হলেও যথেষ্ট পরিমানে পানি পান করার চেষ্টা করবেন।


৫। কোনো বেলা খাবার না খাওয়া :- খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম করলে বা এক বেলা খাবার না খেলে মাথা ব্যথা করতে পারে। কেন? কারন আমরা যা খাই সেই খাবার থেকে শরীর এক প্রকারের চিনি তৈরি করে যেটা ব্রেইনের খাদ্য।

আপনি না খেলে রক্তে সেই চিনির পরিমাণ কমে যায়। আর সে কারণে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। যেই চিনির কথা বললাম সেটা আর চা বানানোর চিনি কিন্তু এক না।


সমাধান কি? কোন বেলার খাবার বাদ দেয়া যাবে না মাথাব্যথা হলেও সময় মত খাবার খেয়ে নিতে হবে।


৬। সারাদিন শুয়ে বসে থাকা :- আপনার শারীরিক পরিশ্রম যদি কম হয় তখন মাথা ব্যাথা দেখা দিতে পারে। সমাধান বুঝতেই পারছেন, নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। 


৭। মানসিক চাপে :- এটা common একটি কারন। কোনো কিছু নিয়ে মানসিক চাপে থাকলে এই মাথা ব্যথা হতে পারে। তাই যা নিয়ে মানসিক চাপে আছেন তার সমাধান করে ফেলতে হবে।


এখন বলব মাথা ব্যথার ওষুধের কথা।


কিন্তু ওষুধ খাওয়ার আগে একটা বিষয় জানতে হবে, তা হলো আপনার মাথা ব্যথাটা অন্যান্য কারণে মাথাব্যথা - যেমন মাইগ্রেনের মাথাব্যথা নয় এটা কিভাবে বুঝবেন।


টেনশন টাইপ মাথাব্যাথা বোঝার উপায় 


আমরা যে টেনশন টাইপ মাথা ব্যাথার কথা বলছি এটা তে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ব্যথা হয়। খুব তীব্র ব্যথা হয়না দিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া যায়। 

সাধারনত এই ধরনের মাথাব্যথার সাথে বমি ভাব বা বমি হয় না। আলো কিংবা আওয়াজে অস্বস্তি লাগে না। হাঁটাচলা করলে মাথা ব্যথা বাড়ে না।


যদি এগুলো দেখা যায় তবে সেই মাথা ব্যথা মাইগ্রেনের কারনে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও এই দুইটি ব্যথা মাথার আলাদা আলাদা জায়গায় দেখা দেয়।

টেনশন টাইপ ব্যথাটা সাধারণত মাথার দুই পাশেই হয়। মনে হয় ব্যথাটা মাথায় চাপ দিয়ে ধরে আছে। কারো কারো ক্ষেত্রে মনে হয় ব্যথাটা একটা টুপির মত টাইট হয়ে মাথায় বসে আছে, আবার কারো কারো মনে হয় যে মাথার ওপর একটা ভারী ওজন বসে আছে।


অনেকেরই মনে হয় ব্যাথাটা মাথার বাইরে থেকে আসছে। সাধারণত ব্যথা মাথার সামনে থেকে পেছনের দিকে এবং ঘাড়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে মাথার অন্য যে কোন জায়গাতেও হতে পারে।

পক্ষান্তরে মাইগ্রেনের ব্যথাটা অন্য রকম হয়। সাধারণত মাথার একপাশে হয় আর ব্যাথাটা টনটন করতে থাকে মনে হয় একটা রক্তনালি সংকচিত আর প্রসারিত হচ্ছে পার্থক্যতো বুঝে গেলাম।

এখন বলছি-

টেনশন টাইপ মাথাব্যথা হলে কোন ওষুধ  কতদিন খাবেন ?

( মাথা ব্যাথার ঔষধের এর নাম কী? )
এই ধরনের মাথাব্যথা কমানোর জন্য ১০০০ মি.গ্রাম পেরাসিটামল কার্যকরী। আমাদের দেশে সাধারনত ৫০০ মি.গ্রামের পেরাসিটামল টেবলেট পাওয়া যায়। ৫০০ মি.গ্রামের টেবলেট হলে ২ টি টেবলেট খাবেন।

কত ঘন ঘন খাবেন?

মাথাব্যথা চলে গেলে এ ওষুধ খাবেন না। যদি মাথা ব্যথা থেকে যায় তবে ৪ থেকে ৬ ঘন্টা পরপর খেতে পারেন। তবে খুব খেয়াল রাখবেন যাতে দিনে ৮ টা টেবলেট এর বেশি না হয়।


ওষুধের এই পরিমাণটা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য। যার অন্য কোন রোগ নেই এবং শরীরের ওজন ৫০ কেজি বা তার বেশি। 

আপনার ওজন যদি ৫০ কেজির নিচে হয় বা অন্য কোন রোগ থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করবেন।


এতক্ষণ বললাম সবচেয়ে common মাথাব্যথা অর্থাৎ টেনশন টাইপ মাথা ব্যথার কারণ ও সমাধান এই ধরনের মাথাব্যথা কষ্টদায়ক তবে নির্বিষ জীবনের জন্য হুমকি নয়।

এখন কয়েকটি মাথাব্যথার ধরন বলব যেটা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া প্রয়োজন।


কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন?

( ঘন ঘন মাথা ব্যাথার কারণ কি ) 

১। ঘন ঘন মাথা ব্যথা দেখা দিলে বা মাথা ব্যথা তীব্র হলে।
২। ব্যথা নাশাক ওষুধ খেয়েও মাথা ব্যথা না কমলে আর ক্রমশো খারাপ হতে থাকলে।

৩। মাথার সামনের দিকে কিংবা একপাশে তীব্র টনটনে ব্যথা হলে। এই ব্যথাটি মাইগ্রেনের হতে পারে অথবা কিছু ক্ষেত্রে ক্লাস্টার হেডেক হতে পারে।

৪। মাথা ব্যথার সাথে বমি ভাব বা বমি হলে এবং আলো বা আওয়াজ যন্ত্রনাদায়ক হয়ে উঠলে। একটু আগেই বলেছি এটা মাইগ্রেন হতে পারে।

৫। আপনার বয়স যদি চল্লিশের বেশী হয়ে থাকে, আগে কখনো মাথা ব্যথা হতো না কিন্তু এখন নতুন করে মাথা ব্যথা শুরু হলে সেটা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

৬। আপনার সাধারণত যেমন মাথাব্যথা হয় তার ধরন অনেক পাল্টে গেলে সেটাও ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

এই শেষ দুটো ধরন বললাম সেগুলো দেখা দিলেই যে ক্যান্সার হয়েছে তেমন না আরও অনেক কারণে হতে পারে। তবে ডাক্তার দেখিয়ে দুশ্চিন্তা মুক্ত হওয়া প্রয়োজন।


কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন?


এখন আর কয়টি মাথাব্যথার ধরন বলব যেগুলো দেখা দিলে অনতিবিলম্বে হাসপাতালে যেতে হবে, কোনক্রমেই দেরি করা যাবে না।


সেই মাথাব্যথার ধরন গুলো কি কি?

( মাথা ব্যাথা কোন রোগের লক্ষণ ) 

১। মাথা ব্যথা হঠাৎ শুরু হলে এবং শুরুতেই ব্যথার তীব্রতা অনেক বেশি হলে অথবা মাথা ব্যথা এত তীব্র হলে যা আপনার জীবনে আগে আর কখনও হয়নি এগুলো ব্রেইনের রক্তক্ষরণের লক্ষণ।

২। মাথায় গুরুতর আঘাত পেলে যেমন কোনো দুর্ঘটনার ফলে বা কোথাও পড়ে যাওয়ার ফলে।

৩। প্রচন্ড মাথা ব্যথার সাথে আরও লক্ষণ থাকলে, যেমন কথা বলতে কিংবা কিছু মনে করতে হঠাৎ অসুবিধা হলে অথবা হাত বা পা দুর্বল বা অবস হয়ে আসলে। এগুলো স্ট্রোকের লক্ষণ। 


ঝিমিয়ে পড়লে অথবা অসংলগ্ন আচরণ করলে কিংবা গায়ে জ্বর আসলে, কাপুনি হলে, ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে অথবা চামড়ায় রেস্ উঠলে এগুলো ব্রেইনে ইনফেকশনের লক্ষণ। 

খিঁচুনি হলে বা অজ্ঞান হয়ে পড়লে ব্রেইনে রক্তক্ষরণের লক্ষণ। চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে আসলে, চোখে ঝাপসা দেখলে বা দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেললে এখানেও দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।


৪। এছাড়াও প্রচন্ড মাথা ব্যথার সাথে খাওয়ার সময় চোয়ালে ব্যথা হলে, চোখে ঝাপসা দেখলে অথবা একটার জায়গায় দুটো দেখলে, মাথার তালুতে চাপ দিয়ে ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন। 

এই লক্ষণগুলো মাথা এবং ঘাড়ের রক্তনালীর প্রদাহের কারণে দেখা দিতে পারে। এক বা দুই চোখই অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।


নিরাপদে থাকবেন, ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং সেই সাথে এটাও আসা করছি লেখাটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। 

লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আরো জানুন :


Post a Comment

0 Comments