হৃদরোগ বা হার্টের সমস্যা হবে না এই ৭টি খাবার খেলে।
আজকে যে বিষয়টি হলো কোন ৭টি খাবার খেলে আমরা হৃদ রোগ থেকে বাঁচতে পারব। হৃদরোগের সাথে সম্পর্কিত আরো যে দুটি প্রধান রোগ আছে অর্থাৎ হাই ব্লাড প্রেসার এবং হাই কোলেস্টরেলও আমাদের দূর হয়ে যাবে।
এমনকি হার্টে ব্লকেজ বা হার্ট অ্যাটাক এই ধরনের যে প্রক্রিয়া গুলোর মধ্যে দিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় একজন মানুষ এই সকল সমস্যা দূর হয়ে যাবে এই সাতটি খাবার খেতে পারলে। ( হার্টের সমস্যার লক্ষণ ও প্রতিকার )
তবে এটা এমন নয় যে ৭টি খাবার আপনাকে প্রতিদিনই খেতে হবে।সাতটি খাবারের মধ্যে থেকে দুই বা তিনটি খাবার আপনি প্রতিদিন সঠিক সময় এবং সঠিক নিয়মে খাবার চেষ্টা করুন।
আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমি এই ৭টি খাবারের নাম জানানোর পাশাপাশি এই ৭টি খাবার কখন খেলে একজন মানুষের দেহে তা উপকার করবে কোন ধরনের ক্ষতি হবেনা পার্শপ্রতিক্রিয়া হবেনা সেই সম্পর্কে বলবো।
আরো পড়ুন
- গ্যাস অম্বলে ভুগছেন ? পেটের সমস্ত গ্যাস বের করুন ৩মিনিটের মধ্যেই ৪টি ঘরোয়া উপায়ে।
- হঠাৎ ব্লাড প্রেশার ( blood pressure ) বা উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গেলে কি করবেন?
- পাইলস বা অর্শ রোগ নিরাময়ে কার্যকরী ঘরোয়া উপায়।
- বুক ধড়ফড় মানেই কী হার্ট অ্যাটাক ( হৃদযন্ত্রের ) সমস্যা?
- ডায়বেটিস কেন হয় এবং এর লক্ষন গুলো কি কি? কিভাবে ডায়বেটিস সারাবেন?
আরেকটি কথা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো বয়স সীমা নেই। হয়তো আপনি শুনে থাকবেন যে ১৮-২০ বছরের একজন তরুণও হঠাৎ করেই হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু বরণ করেছেন।( হার্টের ব্লক দূর করার উপায় )
এর কারণ কী বন্ধু?
কারণ তার দেহে হয়তো খারাপ কোলেস্টেরল বেড়ে গিয়েছিল, রক্তচাপ বাড়তে ছিল কিংবা তার হার্টে ব্লকেজ ছিল। সে এটা বুঝতেই পারেনি। কারণ বয়সের কারণে আমরা দেহের ছোট ছোট এই ধরনের রোগের উপসর্গ কে অবহেলা করি। মনে করি যে আমার তো বয়স কম এখন কেন হৃদরোগ হতে যাবে। ( হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ )
কিন্তু বন্ধু আমাদের সচেতন হওয়া উচিত একদম শিশুকাল থেকেই। এজন্য আজ যে খাবারের নাম গুলো জানাবো এগুলো একদম শিশুকাল থেকেই খাবারের অভ্যাস করতে হবে। ( হৃদরোগীর খাদ্য তালিকা )
ভয় পাবেন না বন্ধু। একদম ঘরোয়া খাবার। শুধুমাত্র আপনাকে নাম গুলো জানতে হবে আর তার সঠিক সেবন পদ্ধতিও জানতে হবে।
হৃদরোগে আক্রান্ত না হতে চাইলে প্রথমে আপনাকে উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে। উচ্চ পটাশিয়াম আছে এমন একটি সাধারণ খাবার হল কলা।
হৃদ রোগীদের খাবার তালিকাঃ
১। কলা : যদি আপনি কলা প্রতিদিন একটি বা দুটি করে খেতে পারেন তাহলে এর পটাশিয়াম আপনার ধমনীর রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখবে, ধমনীর প্রাচীরে চর্বি জমবে না এবং এতে করে কোন ধরনের ব্লকেজ হবার সম্ভাবনা থাকবে না।
এজন্যই বন্ধু প্রতিদিন একটি বা দুটি করে পাকা কলা খাওয়ার অভ্যাস করুন বয়স ওজন এবং উচ্চতা অনুযায়ী।
কলা কখন খাবেন?
এই সম্পর্কে বলব কলা সব সময় সকালে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। নাস্তা করার ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পরে পাকা কলা খেতে পারেন। এতে করে আপনার দেহে সারাদিনের জন্য এনার্জি সঞ্চিত হয়ে যাবে। ( হার্টের সমস্যা বুঝার উপায় )
সারাদিন কখনোই অতিরিক্ত ক্লান্তি দুর্বলতা মাথাব্যথা এই ধরনের কোনো সমস্যাও আপনি বোধ করবেন না। তবে কলা কোন খাবারের সাথে না খেয়ে বরং খাবারের ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পরে খাবার চেষ্টা করুন।
কারণ এটি একটি ফল। যে কোন খাবারের সাথে ফল না খাওয়াই সবচেয়ে ভালো।
দ্বিতীয় যে খাবারের নাম বলব তা হল পালংশাক।
২। পালংশাক : এই পালংশাকে রয়েছে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম। আর আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও আয়রন। এছাড়াও আছে ফলিক এসিড, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-কে।
এই পালং শাকের জল এবং ফাইবারের পরিমাণ রয়েছে উচ্চমাত্রায় এই জন্য পালংশাক খেলে কখনো দেহে পানির অভাব হবে না এবং এর যে ফাইবার রয়েছে তা কখনো পেটের রোগ কনস্টিপেশন এই ধরনের সমস্যা হতে দেবে না।
ফাইবারের আরো একটি কাজ আছে তাহলো আপনার দেহের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখবে। ধমনীর প্রাচীরে কখনো চর্বি জমতে দেবে না। এই কারণে কখনও হার্টে ব্লকেজ হওয়ারও সম্ভাবনা থাকবে না।
পালংশাক খাওয়ার ব্যাপারে দুটি সতর্কতার কথা বলব।
i) এক নম্বর হলো যাদের ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেশি তারা পালংশাক খাবেন না।
ii) আর দুইনাম্বার হল পালংশাক একবার রান্না করে দ্বিতীয়বার কখনো গরম করে খাবেন না এই কথাটি অবশ্যই মনে রাখবেন।
তিন নাম্বারের খাবারটি হচ্ছে ডাবের জল।
৩। ডাবের পানি : ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম। যা দেহকে সব সময় ডিটস্কিফাইড করে বিষ মুক্ত করে। প্রতিদিন একটি করে ডাবের পানি খাওয়ার চেষ্টা করুন। ( হার্টের ব্লক খোলার ঔষধ )
ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো?
সব সময় চেষ্টা করবেন বেলা বারোটার মধ্যে ডাবের পানি খাওয়ার জন্য। কারণ যদি আপনি বেলা বাড়ার পড়ে অর্থাৎ দুপুরের পর যদি ডাবের পানি খান তাহলে তা গ্যাস, এসিডিটির সৃষ্টি করে।
এজন্যই বন্ধু সবসময় দুপুরের আগেই ডাবের পানি খেয়ে নিন। ডাবের পানি খেলে আপনার দেহে কখনো ইউরিন এর প্রবলেম হবে না। এছাড়াও আরও অনেক উপকার রয়েছে যা এই সংক্ষিপ্ত লেখার মাধ্যমে লিখে শেষ করা যাবেনা।
চার নাম্বারের খাবারটি হচ্ছে আলু।
৪। আলু : অনেকেই মনে করেন যে আলু খাওয়া ভালো নয় সেটা সাদা আলু হতে পারে কিংবা লাল রঙের মিষ্টি আলু হতে পারি। যে আলুই হোক না কেন আলু কিন্তু পটাশিয়ামের দারুন উৎস। আলু প্রতিদিন আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। কিন্তু কথা হলো আপনি প্রতিদিন কতটুকু পরিমান আলু খাবেন।
বয়স, ওজন এবং উচ্চতা অনুযায়ী ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম পরিমাণ আলু প্রতিদিন খেতে পারেন। কিন্তু আলু সম্পর্কে একটি সতর্কতা আছে তা হলো, আলু সবসময় সেদ্ধ করে খাওয়াই ভাল।
ভাজা করে খেলে বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস বা বিভিন্ন ধরনের যে আলু খাওয়ার পদ্ধতি রয়েছে এতে করে কিন্তু আলুর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।অর্থাৎ তেলে না ভেজে আপনি আলু সেদ্ধ করে বা তরকারিতে যেকোনোভাবে আলু রান্না করে খেতে পারেন।
পাঁচ নাম্বারে আছে ডালিমের নাম।
৫। ডালিম : ডালিম, বেদানা বা আনার অনেকেই অনেক নামেই ডেকে থাকেন। এই ফলটি প্রতিদিন অন্তত ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম করে খাবারের চেষ্টা করুন।
এটি খেতে পারলে এর মধ্যে থাকা উচ্চমাত্রার ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে এবং ফলিড আপনাকে কখনো হৃদরোগে আক্রান্ত হতে দেবে না।
এছাড়া ডালিম দেহের জ্বালাপোড়া অর্থাৎ হাত-পা জ্বলুনির রোগ যাদের আছে, প্রদাহজনিত যে সকল রোগ আছে এই সকল রোগকে প্রতিরোধ করতে পারে।
প্রস্রাবের ইনফেকশনকে প্রতিরোধ করে এবং অবশ্যই রক্তশূন্যতা দূর করে। যাদের এনিমিয়া রয়েছে তাদের জন্য তো ডালিম খুব উপকারী।
ছয় নাম্বারে আছে তরমুজের নাম।
৬। তরমুজ : তরমুজ কিন্তু গ্রীষ্মকালীন ফল। গ্রীষ্মকালীন ফল হলেও এই যে সময়টাতে তরমুজ আমরা পাচ্ছি সেই সময়টাতে প্রতিদিনই চেষ্টা করবেন এক গ্লাস পরিমাণ তরমুজের জুস খাওয়ার জন্যে। জুস করে খাবারের কথা বলব কারণ তরমুজ কিন্তু হজম হতে একটু বেশি সময় লাগে।
যদি কেউ জুস না করে খান তাহলে তাড়াহুড়ো করে খাবার কারণেই হয়তো ভালো করে চিবিয়ে খাবেন না। এতে করে তা হজম হতে আরও সময় লেগে যাবে। অনেকেই বলে থাকেন যে তরমুজ খেলে পেট গরম হয়, গ্যাস-এসিডিটি হয়, পেট ভার বোধহয়।
তার কারণ আপনি তো তরমুজ ভালো করে চিবিয়ে খাচ্ছে না। অত্যন্ত নরম হওয়ার কারনে এবং এটি রস সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে খুব দ্রুতই মানুষ এটা খেয়ে নিচ্ছেন। এজন্যই আমি বলব এটা অবশ্যই জুস করে খেয়ে নিন। জুসের মধ্যে একদমই বাড়তি কোনো চিনি বা গুড় মেশানোর দরকার নেই। ( হার্টের রোগের ওষুধ কি )
শুধুমাত্র ব্লেন্ডারে বা জুসারে দিয়ে এটি জুস করে খেয়ে নিন। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম এছাড়াও আরও এমন অনেক উপাদান রয়েছে যা হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে থাকে এবং কখনো হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ব্লকেজ, হাই কোলেস্টরেল, হাই প্রেসার এর মত রোগে আপনি আক্রান্ত হবেন না।
সাত নাম্বারটি হল কমলালেবু।
৭। কমলা লেবু : এর মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং
ভিটামিন-সি আপনাকে হৃদরোগজনিত সকল সমস্যা থেকে মুক্ত রাখবে। এছাড়াও শীতকালে যে ঠান্ডা সর্দি কাশি হওয়ার প্রবণতা থাকে এই সমস্যা থেকে তো আপনি অবশ্যই মুক্তি পাবেন।
যদি খুসখুসে কাশি হয় তাহলে কমলালেবু অবশ্যই খাবেন। অনেকেই বলে থাকেন কাশি বা সর্দির সময় কমলালেবু খাওয়ার ঠিক নয়। এটি কিন্তু একদম ভুল। কমলালেবু আপনি দিনের যেকোনো সময় খেতে পারেন। কিন্তু সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি সকালের নাস্তার আধাঘন্টা আগে কমলালেবু খেয়ে নেন।
অথবা আধাঘন্টা পরে খেতে পারেন। বিকেল বেলায় খেতে পারেন। চেষ্টা করবেন সম্পূর্ণ কমলা খাওয়ার জন্য। শুধুমাত্র জুস করে খেলে এর ফাইবার আপনার দেহে প্রবেশ করবে না। আপনি জানেন নিশ্চয়ই কমলার মতো কমলার বীজ ও অত্যন্ত উপকারী।
কমলার বীজ সহ যদি খেতে পারেন সেটি আপনার দেহের জন্য আরো উপকারী হবে। কমলার খোসা বীজ অর্থাৎ সম্পূন্ন কমলাটাই দেহের জন্য উপকারী। কমলার উপরের খোসাটাকে পাতলা করে ফেলে দিয়ে যদি খোসাটাকে স্লাইস স্লাইস করে পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি চায়ের মত করে খেতে পারেন এটিও আপনার হৃদ রোগ প্রতিরোধ করবে।
এই যে ৭টি খাবারের নাম বললাম এই সাতটি খাবার প্রতিদিন ৭টিই খাওয়ার দরকার নেই এর মধ্যে দুটি বা তিনটি প্রতিদিন খাওয়ার অভ্যাস করুন।
হাই ব্লাড প্রেসার, হাই কোলেস্টরেল, হৃদ রোগ সংক্রান্ত সকল সমস্যা থেকে মুক্ত থাকুন। আপনাদের সবার জন্য শুভকামনা সুস্থ থাকুন।
0 Comments