Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Wigete

হঠাৎ ব্লাড প্রেশার ( blood pressure ) বা উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গেলে কি করবেন? high bp.


যারা উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার ভুগছেন তাদের ব্লাড প্রেসার যদি দ্রুত অনেক বেড়ে যায় তখন একটা বিপদজনক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। 


তাই আমি এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আলোচনা করবো কি কি ভুলের কারণে প্রেশার অনেক বেড়ে যেতে পারে। আর বেড়ে যদি যায়ই তবে কি করবেন। 

হঠাৎ ব্লাড প্রেশার ( blood pressure ) বা উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গেলে কি করবেন? high bp.


শুরু করছি কারণগুলো ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলে।


সবচেয়ে কমন কারণ হলো হাই ব্লাড প্রেসার চিকিৎসার না হওয়া বা অপর্যাপ্ত চিকিৎসা হওয়া।



কখন এমন হতে পারে?


চারটা উদাহরণ দিচ্ছি


১। যদি রোগীর না জানে যে তার উচ্চ রক্তচাপ আছে

এটাও কি সম্ভব ? 


যার রোগ সে আবার যানেনা কিভাবে। 

শুধু যে সম্ভব তাই না বরং গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চরক্তচাপের অর্ধেক রোগী-ই জানেন না যে তারা এই রোগে ভুগছেন। 


কারণ এই রোগের সাধারণত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। একমাত্র ব্লাড প্রেসার মাপলেই বোঝা যায় কার উচ্চ রক্তচাপ আছে। গত এক বছরে যারা রক্তচাপ মাপেননি তারা তো জানবে না তাদের এই রোগ আছে কিনা না।


না জানলে চিকিৎসা হবে না জীবনে কোনো পরিবর্তন আসবে না তখন রক্তচাপ অনেক বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে 



২। ব্লাড প্রেসারের ঔষধ খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া- 

অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শে ব্লাড প্রেসারের ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। তারপর একটু সুস্থ বোধ করলে ডাক্তার পরামর্শ না নিয়ে নিজে নিজেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়। 


আপাত দৃষ্টিতে শরীরে কোন সমস্যা হয় না। তবে হাই ব্লাড প্রেসার নিরবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতি করতে থাকে। যেমন ধরেন উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্তনালীর ক্ষতি হওয়া একটা কমন ব্যাপার। 


রক্তনালীর এই ক্ষতি হঠাৎ একদিন মাঝরাতে রক্তচাপ অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে। এজন্যই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া প্রেসারের ওষুধ বন্ধ না করতে অনুরোধ করেন।


৩। ব্লাড প্রেশারের ওষুধ কমিয়ে খাওয়া- 

ডাক্তার দুইটি ঔষধ দিয়েছেন কিন্তু আপনি একটা ওষুধ খাচ্ছেন অথবা ডাক্তার বলেছে দুই বেলা ওষুধ খেতে আপনি একবেলা করে ঔষধ খাচ্ছেন। 

কারণ জিজ্ঞেস করলে কিছু রোগী বলেন আমার শরীরে তো কোনো অসুবিধা হচ্ছে না ভালোই আছি। এমনটা করার কারণে আপনার ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে।

 

সেটা হয়তো আপনি বুঝতেও পারবেন না এখানে স্পষ্ট করে নেই ব্লাড প্রেসারের ঔষধ সারা জীবন একই পরিমানে খেতে হবে ব্যাপারটা এমন নয়, অবশ্যই পরিস্থিতি অনুযায়ী বাড়ানো বা কমানো যাবে।  


এমনকি ওষুধ বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে কিন্তু সেটা হতে হবে আপনার ব্লাড প্রেসার কত, শরীরের অন্যান্য কি কি রোগ আছে ইত্যাদি বিষয়ে যত্ন সহকারে বিবেচনা করে।


এই বিবেচনায় কাজটি নিজে না করে অনুগ্রহ করে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। না হলে বিপদ হতে পারে। অনেকে আরেকটা যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন তোলেন যে, ব্লেড প্রেসারের ঔষধে কি কোনো সাইড ইফেক্ট নেই? 


উত্তর হল সাইড এফেক্ট আছে তবে ওষুধ না খেলে শরীরের যে ক্ষতি হবে সে তুলনায় ওষুধের সাইডিফেক্ট অনেক কম তাই এই ওষুধ খেতে পরামর্শ দেয়া হয়।


৪। ওষুধ খেতে ভুলে যাওয়া- 

প্রেসারের ঔষধ সাধারণত প্রতিদিন খেতে হয়। কিন্তু হাই ব্লাড প্রেসার হলে রোগী যেহেতু সাধারণত কোন ব্যথা বা অসস্তিতে থাকেন না তাই অনেক রোগী ঔষুধ খেতে ভুলে যান। 


একটা উদাহরন দিচ্ছি,


আমাদের শরীরে যদি জ্বর বা প্রচন্ড মাথা ব্যথা হয় তাহলে সেই জ্বর বা ব্যথা আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে ওষুধ খেতে হবে। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপে তেমন কোনো লক্ষণ সাধারণত থাকে না। তাই অনেক সময় ওষুধ খেতে ভুলে যান।


এছাড়াও প্রেসার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আরো কিছু কারণ আছে সেগুলো কি কি? 

১/ মানসিক চাপ 

২/ নির্দিষ্ট কিছু রোগ আর 

৩/ নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ। 


এখন আসি প্রেসার হঠাৎ বেড়ে গেলে কি করনীয় :- 


আপনি প্রেসার মেপে দেখলেন উপরেরটা 180 বা নিচেরটা 120 এর বেশি। তারপর আপনার প্রথম কাজ হলো না ঘাবড়ানো। 


শান্ত হয়ে বসুন তারপর পাঁচ মিনিট পরে আবার সঠিক নিয়মে ব্লাড প্রেসার মাপুন। দ্বিতীয়বার মাপার পরও যদি প্রেসার বেশি আসে তাহলে আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে আর দেরি করা যাবে না। 


কী ব্যবস্থা নিবেন সেটা দুই ভাগে ভাগ করে বলছি। 

প্রথম ভাগ হলো যাদের প্রেসার হাই কিন্তু আর কোন লক্ষন নাই তাদের জন্য। 


আর দ্বিতীয় ভাগ হলো যাদের প্রেসার হাই এবং সাথে অন্যান্য লক্ষণ আছে তাদের জন্য।


প্রথমে বলি যাদের প্রেসার হাই কিন্তু আর কোনো লক্ষণ নেই। এমনটা হলে প্রথম কাজ হলো খুঁজে বের করা, কেন প্রেসার এত বেড়ে গেল, প্রেসারের ঔষধ ঠিকমতো কাজ করছে কি না, একই শরীরের অন্য কোনো অসুবিধার সৃষ্টি হল কিনা। 


এটা একটা সূক্ষ্ম কাজ - যার জন্য প্রয়োজন মেডিকেল নলেজ। এটা বাসায় বসে নিজে নিজে করা ঠিক হবে না। তাই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তবে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আর দুইটা কাজ করবেন। 


১। এক ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি ঘন্টায় ব্লাড প্রেশার মেপে দুটো সংখ্যায় একটা কাগজে লিখে রাখবেন। সাথে লিখবেন কয়টার সময় এই প্রেসার মেপেছেন, পরপর কয়েক ঘন্টা দিনে কয়েকবার এই সংখ্যা দেখলে ডাক্তার বুঝতে পারবেন আপনার ব্লাড প্রেসারের অবস্থা কেমন। 


২। আপনি ব্লাড প্রেসারের জন্য কি কি ওষুধ খান, কি পরিমাণে কোন সময় খান, কোন কোন বেলায় ওষুধ খেতে মিস করেছেন সেই সব তথ্য আর কাগজপত্র একত্র করবেন। অন্য কোন ওষুধ খেয়ে থাকলে সেটা হোমিওপ্যাথ বা ভেষজ ঔষধ সেগুলোর সাথে করে নিয়ে যাবেন। 


এই  দুইটা তথ্য পেলে চিকিৎসকের জন্য সহজ হবে আপনার শরীরে কি হচ্ছে সেটা বোঝা এবং তিনি প্রকৃত অবস্থা জেনে শুনে একটা সুচিন্তিত মতামত দিতে পারবেন।


আপনি কখনই চাইবেন না যে একজন ডাক্তার আপনার শরীরের অবস্থা না জেনে পরামর্শ দেন। ডাক্তার কে সঠিক তথ্য জানাতে আপনি যতটা সাহায্য করবেন আপনার চিকিৎসা ততটাই ভালো হবে। 


এসব দেখেশুনে একজন ডাক্তার আপনার প্রেশারের ওষুধ পাল্টে দিয়ে বা নতুন কিছু ওষুধ দিয়ে প্রেশার নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করবেন। যদি মানসিক চাপ বেশী থাকে সেটার চিকিৎসা করবেন। 


তারপর এক সপ্তাহ পর তিনি আবার দেখবেন আপনার স্বাস্থ্য এবং প্রেসারে কি অবস্থা। লক্ষ্য হল ব্লাড প্রেসার 130/80 এর নিচে আনা। লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত তিনি অন্তত মাসে একবার আপনাকে দেখবেন এবং লক্ষ্যে পৌঁছে গেলে তিন থেকে ছয় মাসে একবার। 


এক্ষেত্রে আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন যে, আমি তো ভালোই আছি তাহলে এত কিছু করার দরকার কি? 


এটা একটা ভালো প্রশ্ন। তবে ঐ যে শুরুতে বললাম মারাত্মক বিপদ এখনো হয়নি কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ অনেকদিন থাকলে বিপদ আসন্ন। 

তাই খুব কড়া নজর রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।


 এতক্ষন বলেছি যাদের প্রেসার দ্রুত অনেক বেড়ে গেছে কিন্তু অন্য কোনো অসস্থি বা বাহ্যিক লক্ষণ দেখা দেয়নি। 


এখন বলবো প্রেসার বাড়ার পাশাপাশি বাহ্যিক লক্ষণ দেখা দিলে কি করবেন?


এই লক্ষণগুলো কি কি সংক্ষেপে বলে দিচ্ছি, 


মাথা ব্যথা, 

চোখে ঝাপসা দেখা, 

বমি ভাব বা বমি,

কনফিউশন বা রোগী আবোল-তাবোল বকা, 

ভুলে যাওয়া, 

ঝিমিয়ে পড়া, 

অচেতন বা অজ্ঞান হয়ে পড়া,

খিঁচুনি, 

মুখ বেঁকে যাওয়া, 

হাত বা পা অবস হয়ে যাওয়া বা নাড়াতে না পারা, 

মুখে কথা আটকে যাওয়া,

পিঠ বা পেটে ব্যথা, 

অস্থির লাগা,

বুকে ব্যথা, 

শ্বাসকষ্ট, 

প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, 


এমন হলে নিজে নিজে ওষুধ খেয়ে প্রেসার কমানোর চেষ্টা করবেন না কারণ এই অবস্থায় খুব সতর্কতার সাথে প্রেসার কমাতে হয়।


এমনকি কিছু ক্ষেত্রে প্রেসার কমালে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যেমন রোগী যদি স্ট্রক করে থাকে তাহলে সাথে সাথে প্রেসার কমানো হয় না তাতে ব্রেইনের রক্ত চলাচল আরো কমে যেতে পারে। 


আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রেসার খুব দ্রুত নামিয়ে আনা লাগে যেমন মূল রক্তনালি যদি ছিঁড়ে যায়। আর সাধারণত শিরায় ইনজেকশন দিয়ে প্রেসার কমানো হয় মুখে ঔষধ দেয়া হয় না।  


বাসায় বসে আপনার পক্ষে তো এসব হিসাব নিকাশ সম্ভব নয়। তাই মাথা ঠান্ডা রেখে কিভাবে দ্রুততম উপায় রোগীকে এমার্জেন্সি বিভাগে নেয়া যায় সেই পরিকল্পনা করুন। 


অনেকে জিজ্ঞেস করে টক বা তেঁতুল খেলে প্রেসার কমবে কিনা? 

উত্তর হলো না-


তাৎক্ষণিকভাবে প্রেসার কমানোর জন্য এটা ভালো উপায় নয়। বরং তেঁতুল খুঁজতে গিয়ে যদি হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হয় সেটা রোগীর জন্য উপকার বয়ে আনবে না। তবে দীর্ঘ মেয়াদে তেতুল খেলে উপকার  আছে।


কারন তেঁতুল একটা ফল আর উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের  আমরা দিনে চার থেকে পাঁচটা মাঝারি সাইজের ফল খেতে বলি। কারণ ফলে তুলনামূলকভাবে বেশি পটাশিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 


তেঁতুলে ভালো পরিমাণে পটাশিয়াম আছে।  অন্যান্য ফল যেমন খেজুর, কলা, কমলা, আম, গাজরেও পটাশিয়াম আছে। তেঁতুলই খেতে হবে এমন কথা নেই। 


সকলে নিরাপদে থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং আশা করি এই কথাগুলো মাথায় রাখবেন। 


যদি লখাটি পড়ে আপনার কোনো উপকারে আসে তবে অবশ্যই কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। 


আর আমাদের সঙ্গেই থাকুন এরকম আরো স্বাস্থ সেবা মুলক তথ্য পেতে।


লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আরো জানুন :

 


Post a Comment

0 Comments