মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়
বাসা থেকে বের হয়েছেন, হঠাৎ মনে হয় দরজাটা ঠিক মতো Lock করেছেন তো, চুলা কি এখনো জ্বলছে, ফ্যানের সুইচ কি অন করা।
অনেকে মনে করার চেষ্টা করেও মনে করতে পারেন না। আবার এমনও হয় চেয়ার থেকে উঠার পর মনে নেই কেন উঠেছেন।
অনেকদিন পর কারো সঙ্গে দেখা, তার চেহারা চিনতে পারছেন কিন্তু তার নাম মনে নেই বেমালুম ভুলে গেছেন।
এমনটা বারবার হতে থাকলে বুঝবেন আপনার ভুলে যাওয়ার প্রবণতা আছে। কিন্তু এই প্রবণতা শুধু আপনার আছে এমনটা নয়।
গ্যাস অম্বলে ভুগছেন ? পেটের সমস্ত গ্যাস বের করুন ৩মিনিটের মধ্যেই ৪টি ঘরোয়া উপায়ে।
আমাদের পাশে পাশে থাকা অনেক মানুষ প্রতিনিয়তই এই ভুলে যাওয়ার প্রবণতা সাথে বসবাস করছেন এক্ষেত্রে কি কোনো সমাধান নেই?
অবশ্যই আছে - সেগুলো কি জানতে এই লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। লেখাটি একটু বড় হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পড়লে এই সমস্যার সমাধান খুজে পাবেন এটা আমি ১০০% গেরান্টি সহকারে বলতে পারি।
আমাদের ভুলে যাওয়ার সমস্যা অনেক সময় বংশগত হতে পারে। মার্কিন হেলথ লাইন জার্নাল তাই বলছে।
তবে স্মৃতিশক্তির উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে আপনি কি খাচ্ছেন এবং আপনার জীবনযাত্রা কেমন।
সাধারণত খুব মানসিক চাপ, বিষন্নতা বা উদ্রেগ জনিত রোগ থাকলে কিংবা দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমের সমস্যা হলে আমাদের স্মৃতিশক্তিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
হঠাৎ ব্লাড প্রেশার ( blood pressure ) বা উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গেলে কি করবেন?
সেই সঙ্গে ভিটামিন B-12 এর অভাব থেকে পানিশূন্যতা, থাইরয়েডের সমস্যা, ধূমপান মদপানের অভ্যাস কিংবা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও হতে পারে ভুলে যাওয়া রোগ।
হৃদরোগ, হাই ব্লাডপ্রেসার, ডায়াবেটিস হরমোনাল ভারসাম্যহীনতার সমস্যা থাকলেও স্মৃতি লোপ পেতে পারে।
পাইলস বা অর্শ রোগ নিরাময়ে কার্যকরী ঘরোয়া উপায়।
বুক ধড়ফড় মানেই কী হার্ট অ্যাটাক ( হৃদযন্ত্রের ) সমস্যা?
এছাড়া বয়স হওয়ার সাথে সাথে আমাদের স্মৃতি শক্তি ঝাপসা হতে শুরু করে। সময়মতো সচেতন না হলে এই হুট-হাট ভুলে যাওয়ার সমস্যা ডিমেনসিয়া এবং আলজাইমার্স মত কঠিন সমস্যায় রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছেন মানসিক রোগ বিশেজ্ঞরা।
আসার কথা হল আপনি যে কোন বয়সের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারেন এজন্য মনে রাখতে হবে এই ৯ টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস।
১। খাদ্যাভ্যাস :- মস্তিষ্কে জেন জং না পড়ে সেজন্য কি খাচ্ছেন সেটা খুব জরুরী। আমাদের খাবারের ২০ শতাংশ শর্করা ও শক্তি আমাদের মস্তিষ্কে যায়। মস্তিষ্কের খাবার হচ্ছে অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ।
তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে এমন খাবার বেছে নিন যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে তাই যত পারেন ফল ও শাকসবজি খান। সম্ভব হলে প্রতিদিন এক কাপ গ্রিন টি খেতে পারেন।
তার সাথে যুক্ত করতে হবে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার যেটা আপনি সামুদ্রিক মাছ এবং বাদামে পাবেন। আর সবচেয়ে জরুরি হলো অতিরিক্ত চিনি, কার্বোহাইড্রেট আর ক্লোস্টোরেল যুক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়া। সেই সঙ্গে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
২। পর্যাপ্ত ঘুম :- আমাদের মস্তিষ্কের মাঝে মাঝে U আকৃতির একটি অংশ আছে একে হিপোক্যাম্পাস বলা হয়। এই হিপোক্যাম্পাস হলো আমাদের মেমোরি কার্ড বা হার্ড ডিস্ক।
মানুষ যখন ঘুমায় তখন মস্তিষ্কের এই অংশটিতে নতুন নিউরোকোষ জন্মায় যার কারনে স্মৃতি প্রখর থাকে।স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের খুবই প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং নির্দিষ্ট সময় ঘুম থেকে উঠুন। সেটা ছুটির দিন হলেও। এজন্য সন্ধ্যার পরে চা কফি খাবেন না ঘুমের অন্তত এক ঘন্টা আগে নিজেকে মোবাইল, ল্যাপটপ বা যেকোন ডিভাইস থেকে দূরে রাখতে হবে।
৩। ব্যায়াম:- আপনি যদি আজকে থেকে নিয়মিত ব্যায়াম শুরু করেন বিশেষ করে হার্টের ব্যায়াম এবং শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম তাহলে আপনার স্মৃতি হারানোর রোগ ডিমেনশিয়া বা এজাইমার্স হওয়ার আশঙ্কা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসবে।
মার্কিন এক গবেষণায় এমন প্রমাণ মিলেছে। কারন ব্যায়ামের ফলে মস্তিষ্কে বেশি হারে অক্সিজেন ও গ্লুকোজ সরবরাহ হয়। এছাড়া ব্যায়ামের ফলে মস্তিষ্কে সিনাস্কের সংখ্যা বাড়ে ফলে মগজে নতুন নতুন কোষ তৈরি হয়।
ঘুমের সমস্যার ( sleep disturbance ) ঘরোয়া সমাধান। অনিদ্রা দূর করার জন্য ১৩ টি টিপস।
ডাচ বিজ্ঞানেরা ৭২ জন শিক্ষার্থীদের ওপর গবেষণা পরিচালনা করেছেন কোন কিছু শেখার ৪ ঘণ্টা পর ব্যায়াম করলে সেটা বেশি মনে থাকে।
কারণ ব্যায়াম করলে শরীর থেকে প্রোটিন নির্গত হয় মস্তিষ্কে যে অংশটি স্মৃতি রক্ষায় কাজ করে প্রোটিন সেই অংশটা আরো চাঙ্গা করে তোলে। কিন্তু কোনো কিছু মনে রাখার ক্ষেত্রে কতক্ষণ পর শরীর থেকে সেই প্রোটিন নির্গত হচ্ছে সেটা বেশ জরুরী। তাই পড়াশোনার পর পরই নয় বরং ৪ ঘণ্টা পর ব্যায়াম করুন।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে কোনো কিছু হেটে হেটে মুখস্থ করলে সেটা বেশি মনে থাকে।
৪। ধূমপান ও মদপান ছাড়ুন :- গবেষকরা বলছেন আমাদের মস্তিষ্ক তখনি ভালোভাবে কাজ করবে যখন এতে যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন প্রবাহিত হবে।
কিন্তু ধূমপানের ফলে যেসব ধমনের মধ্যে দিয়ে মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছায় সেগুলো বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই ধূমপান ছাড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন মানসিক বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া অতিরিক্ত মদ পান করলে মস্তিষ্কে হিপোক্যাম্পাস অংশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই অতিরিক্ত মদপানের ব্যাপারে ও সাবধান।
৫। সামাজিক হন :- গবেষণায় দেখা গেছে যারা তার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ থাকে না তাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে শুরু করে। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়ান এবং সেটা মুখোমুখি যোগাযোগ মোবাইল ফোনে নয়।
নিজের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামনা সামনি নিয়মিত কথা বলুন দূরে কোথাও ঘুরতে যান, আড্ডা দিন, সবার সাথে মিলে হাসা-হাসি করুন, সবসময় আনন্দে মেতে থাকার চেষ্টা করুন। ভালো হয় যদি শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন।
যারা আপনাকে রাগিয়ে দেন বা মানসিক চাপ দেন তাদেরকে কাছে ঘেসতে দেবেন না।
৬। মানসিক চাপ কমান :- এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন চাইলে তো মানসিক চাপ কমানো সম্ভব?
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন সম্ভব!
আপনি হয়তো আপনার সাথে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা বা উদ্বেগের কারণ গুলো রাতারাতি ঠিক করতে পারবে না। কিন্তু এমন কিছু করতে পারেন যার কারনেই স্ট্রেস হরমোন কম নিঃসরণ হয়।
প্রথমত ব্যক্তিগত কাজ হোক বা পেশা, কোথাও বাড়তি চাপ নেবেন না। অবশ্যিক কাজ গুলো অবশ্যই করবেন। কিন্তু সীমার বাইরে গেলে না বলতে শিখুন।
একসাথে অনেক কাজ না করে বিরতি দিয়ে দিয়ে করুন। কাজ যেমন জরুরি তেমনি জরুরি অবসরও। এই দুটোর মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে।
মানষিক বিশেষজ্ঞরা অনুভূতি প্রকাশ করতে বলেছেন। হাসি-কান্না, রাগ, বিরক্তি কোনো কিছু চেপে রাখবেন না। তাছাড়া বই পড়া, দাবা খেলা, শব্দ জট, লুডু, বাজেলের মত খেলা মস্তিষ্ককে সার্প করে।
চেষ্টা করুন নতুন কিছু শিখতে সেটা হোক নতুন কোন ভাষা, রান্না-বান্না, গাড়ি চালানো, ছবি আঁকা, সাঁতার কাটা কিংবা বাগান করা।
অর্থাৎ এমন কিছু যেটা আপনাকে উন্নত করবে সেই সঙ্গে যেটা আপনি উপভোগ করবেন। এতে আপনার মানসিক চাপ কমবে। সেইসঙ্গে স্মৃতিশক্তি ভালো থাকবে।
৭। ধ্যান :- নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন এর অভ্যাস করলে আপনার স্বাস্থ্যের ওপর বেশ ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে মস্তিষ্কের নিউরন কোষগুলো বাড়াতে সাহায্য করে।
তাইওয়ানে কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত ধ্যান করেন তাদের স্মৃতিশক্তি ভালোভাবে কাজ করে।
৮। ইন্দ্রিয় দিয়ে মনে রাখুন :- কোন কিছু মনে রাখতে এর ছবি, রং, গন্ধ, স্পর্শ এবং স্বাদের সাথে তথ্য মিলিয়ে মনে রাখার চেষ্টা করুন। এটাকে নেমোনিক বলা হয়। যেমন ধরুন কারো বাসা কাঁঠালবাগানে। কল্পনা করুন সেই মানুষটি কাঁঠালের একটি বাগানে দাঁড়িয়ে আছে।
লিখুন কারন কোন কিছু লিখে রাখলে সেটা মস্তিষ্কেও লেখা হয়ে যায়। আপনি যা মনে রাখতে চান সেটা উচ্চস্বরে পড়ুন। এছাড়া পুরো বিষয়টিকে যদি ছোট ছোট অংশে ভাগ করে যদি আপনি ছন্দে ছন্দে মিলিয়ে মুখস্ত করেন সেটা মনে থাকবে।
সবচেয়ে ভালো হয় শব্দের প্রথম অক্ষর দিয়ে ছন্দ তৈরি করতে পারলে যে তথ্য আপনার আগে থেকেই মনে আছে সেটা ব্যবহার করেও নতুন তথ্য মনে রাখতে পারেন।
সেই সঙ্গে যেটা আপনি মাত্র শিখেছেন সেটা কিছু সময় বিরতি দিয়ে প্র্যাকটিস করুন বা রিয়ার্সেল করুন।
৯। সুর ও সঙ্গীত :- গান শোনার সময় আমাদের মস্তিষ্ক সক্রিয় হয়ে ওঠে, এটা গবেষণায় দেখা গেছে। নিয়মিত ভালো ভালো গান শোনার অভ্যাস আপনাকে ডিমেনশিয়া থেকে দূরে রাখবে। এ কারণে কাজের ফাঁকে অবসর সময়ে গান শুনুন, গানের অনুষ্ঠান দেখতে যান।
কিন্তু এরপরও যদি দেখেন আপনি হঠাৎ খুব স্বাভাবিক বিষয় গুলো ভুলে যাচ্ছেন লিখতে ভুলে গেছেন, শব্দ হারিয়ে ফেলছেন, বাড়ির ঠিকানা ভুলে গেছেন তাহলে দেরি না করে অবশ্যই একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কারণ এগুলো ডিমেনশিয়ার লক্ষন।
solution mind চেষ্টা করে প্রতিদিনের অভিজ্ঞতার এমন নানা বিষয়ে সহজভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে।
তাই এমন কোন বিষয়ে যদি আপনার জানার আগ্রহ থাকে তাহলে আমাদেরকে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন।
আর এতক্ষন সঙ্গে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।
0 Comments